শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:০৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পদ্মা সেতুর পিলারে কেন বারবার ফেরির ধাক্কা

পদ্মা সেতুর পিলারে কেন বারবার ফেরির ধাক্কা

স্বদেশ ডেস্ক: শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে আবারও ফেরির ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ছোট আকারের ফেরি কাকলি এ ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় সঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় ওই ফেরির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. বাদল হোসেন এবং হুইল সুকানি আব্দুর রশিদকে গতকাল শুক্রবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার চতুর্থবারের মতো পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ২০ ও ২৩ জুলাই ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারে এবং ৯ আগস্ট ১০ নম্বর পিলারে আঘাত লাগে। এসব ঘটনায় থানায় জিডি, তদন্ত কমিটি গঠন ও ফেরি চালকদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বারবার কেন পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগছে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। এ ঘটনাকি শুধুই দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বা নাশকতা তা জানা যায়নি। এ রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক সংস্থা। এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে আর যেন ধাক্কা না লাগে তার কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে গতকাল সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি সভা করার কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, কেন পদ্মা সেতুতে বারবার আঘাত লাগছে, কি কারণে লাগছে- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরষের মধ্যে ভ‚ত আছে কিনা, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
বিআইডবিøউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানিয়েছেন, ফেরির ধাক্কায় সেতুর পিলারের কোনো প্রকার ক্ষতি হয়নি। ফেরি কাকলি মাদারীপুরের
বাংলাবাজারঘাটে যাত্রীসহ যানবাহন বোঝাই করে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে ফেরির ধাক্কা লেগে যায়। তার দাবি, পদ্মা অববাহিকায় প্রচÐ স্রোত ও বাতাস থাকায় ফেরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ফেরির বাইরের সাইডে ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পানির স্তরের উপরে থাকায় ফেরিতে পানি ওঠেনি। এ অবস্থায় ফেরিটি নিরাপদেই শিমুলিয়াঘাটের গন্তব্যে পৌঁছেছে। ফেরিতে থাকা কোনো যাত্রী আহত হয়নি।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার আগে ফেরি কাকলির মাস্টার বাদল হোসেন বলেন, ফেরিটি সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী স্থান দিয়েই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদ্মায় প্রচÐ স্রোত ও বাতাস। এ কারণে ফেরিটি যেভাবে আসার কথা ছিল সেইভাবে আসতে পারেনি। পরে ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে ফেরির আঘাত লাগে। এতে ফেরি কিংবা ফেরিতে থাকা যানবাহনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এমনকি যাত্রীসাধারণ ধাক্কার সময় টের পর্যন্ত পায়নি। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহলরত ছিল।
ফেরির মাস্টার আরও দাবি করেন, গেল ১১ আগস্ট তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন এ ফেরি দিয়ে বর্তমানে পদ্মা চলাচল করা সম্ভব নয়। প্রচÐ স্রোতে ফেরি কাজ করে না। ওই লিখিত পত্রে ফেরিটি অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তরের কথাও বলা হয়। কিন্তু লিখিত দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে একটি সভায় পদ্মা সেতুর কোন স্থান দিয়ে ফেরি পারাপার হবে- তা নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেতুর ২ নম্বর পিলার থেকে ৬ নম্বর পিলারের মধ্য দিয়ে ফেরি চলাচল করার কথা। ওই সভায় পদ্মা সেতুর ব্রিগেড কমান্ডার, বিআইডবিøউটিসি ও বিআইডবিøউটিএর চেয়ারম্যান, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। উনাদের উপস্থিতিতে ফেরি চলাচলের নীতিগত সিদ্ধান্তের পরও ফেরি কেন সেতুর ১০ নম্বর পিলারের কাছ দিয়ে যায়- তা আমাদেরও প্রশ্ন।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, পদ্মা সেতুর কোনো জায়গায় আঘাত লাগলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে। যদি এ ধরনের ধাক্কায় সেতুর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তার পরও বারবার আঘাতে মানুষের হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমরা খুবই বিব্রতবোধ করছি। একের পর পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে ফেরির ধাক্কা প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাটে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। এর আগে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিআইডবিøউটিসির জাহাজ বড়ালে চড়ে পদ্মা সেতুর এলাকা ও মাদারীপুরের মাঝিকান্দিঘাট ঘুরে দেখেন।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনার পর কিছু নির্দেশিনা ছিল। এ নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে কিছু উদাসীনতা লক্ষ্য করেছি। পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্বলতা, দায়িত্বহীনতা আসলে কোথায় সেটিও দেখা হচ্ছে। যারা দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গেল ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা দেয়। ওই ঘটনায় ফেরির মাস্টার ও সুকানিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৩ জুলাই সকালে রো রো ফেরি শাহ জালাল সেতুর ১৭ নম্বর পিলার ও ২০ জুলাই রো রো ফেরি শাহ মখদুম সেতুর ১৬ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়।
এদিকে বিআইডবিøউটিসি এক বার্তায় জানিয়েছে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি স্বল্পতা রয়েছে। তাই বিকল্প রুট হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট ব?্যবহারের জন?্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877